আল-কোরান: ইসলামের মহাগ্রন্থ

ভূমিকা

আল-কোরান ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, যা মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন। এটি শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ২৩ বছর ধরে ধাপে ধাপে ওহির মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়। কোরান শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য পথনির্দেশনা ও জীবনবিধান।

আল-কোরানের পরিচিতি

আল-কোরান আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে মোট ১১৪টি সূরা ও ৬,২৩৬টি আয়াত রয়েছে। এটি বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করে, যেমন—তাওহীদ (একত্ববাদ), রিসালাত (নবুওত), আখিরাত (পরকাল), ইবাদত, নৈতিকতা, পারিবারিক ও সামাজিক বিধান, অর্থনৈতিক নীতিমালা, রাজনীতি ও বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি।

আল-কোরানের অবতরণ প্রক্রিয়া

আল-কোরান হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়। এটি ধাপে ধাপে ২৩ বছরে সম্পূর্ণ হয়। মক্কী ও মাদানী এই দুই ভাগে বিভক্ত সূরাগুলো ইসলামের মৌলিক দিক ও সামাজিক বিধানের ওপর আলোকপাত করে।

আল-কোরানের গুরুত্ব

আল-কোরান শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি মানবজীবনের সকল দিক নির্দেশনা প্রদান করে। এটি মানবজাতির জন্য আল্লাহর বাণী এবং চূড়ান্ত সত্য। এতে রয়েছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, যা মানবজাতির কল্যাণ নিশ্চিত করে। এটি আমাদের ইহকাল ও পরকালের মুক্তির পথ প্রদর্শন করে।

আল-কোরানের ভাষা ও শৈলী

আল-কোরান একটি অলৌকিক গ্রন্থ, যার ভাষা অত্যন্ত কাব্যময়, গভীর অর্থবোধক ও সহজবোধ্য। এটি অসংখ্য অলঙ্কার, উপমা ও উদাহরণের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটে। কোরানের ভাষা এমন যে, আরবি ভাষাবিদরাও এটি অনুকরণ করতে অক্ষম।

আল-কোরানের বার্তা

কোরানের মূল বার্তা তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গঠিত:

  1. তাওহীদ (একত্ববাদ) – আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি সৃষ্টিকর্তা ও সকল ক্ষমতার মালিক।
  2. রিসালাত (নবুওত ও গ্রন্থ) – মহান আল্লাহ বিভিন্ন যুগে তাঁর নবীদের মাধ্যমে মানুষকে পথ দেখিয়েছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল।
  3. আখিরাত (পরকাল) – মৃত্যুর পরের জীবনই প্রকৃত জীবন। কিয়ামতের দিন সকলকে তাঁর কর্মফল অনুযায়ী হিসাব দিতে হবে।

কোরানের প্রধান বিষয়সমূহ

  1. ইবাদত ও ধর্মীয় বিধান: নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ও অন্যান্য ইবাদতের বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
  2. নৈতিকতা ও চারিত্রিক গুণাবলী: সততা, আমানতদারিতা, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, দয়া ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেয়।
  3. পারিবারিক জীবন: বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
  4. সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিধান: সুদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ইনসাফ, দান-সদকা ও দাসপ্রথার অবসান নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে।
  5. বিজ্ঞান ও জ্ঞান: বিশ্বসৃষ্টির রহস্য, মানবজীবনের উৎপত্তি, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, পাহাড়ের ভূমিকা, সমুদ্রের গভীরতা, মানব ভ্রূণতত্ত্ব ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক বিষয়ে আলোকপাত করেছে।
  6. আইন ও বিচারব্যবস্থা: কোরানে হত্যার শাস্তি, চুরির দণ্ড, সাক্ষ্য প্রমাণের গুরুত্ব ও অপরাধ দমনের বিভিন্ন বিধান রয়েছে।

আল-কোরান ও হাদিসের সম্পর্ক

আল-কোরান ইসলামের মূল গ্রন্থ, আর হাদিস নবী (সা.)-এর কথা, কাজ ও অনুমোদিত বিষয়াবলি। হাদিস কোরানের ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং কিভাবে কোরানের বিধান বাস্তবে পালন করতে হয় তা শেখায়।

কোরান অধ্যয়ন ও আমল করার গুরুত্ব

আল-কোরান পাঠ, অনুধাবন ও অনুসরণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক। এটি কেবল তেলাওয়াত করার জন্য নয়, বরং এর মর্ম বুঝে জীবনযাত্রায় বাস্তবায়ন করা উচিত। কোরানের শিক্ষা অনুযায়ী চললে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা নিশ্চিত হয়।

উপসংহার

আল-কোরান মানবতার মুক্তির চাবিকাঠি। এটি আল্লাহর এক অপার অনুগ্রহ, যা মানুষের জন্য সত্য ও ন্যায়ের পথনির্দেশনা দেয়। আমাদের উচিত কোরান পড়া, বুঝা এবং এর শিক্ষা জীবনে প্রয়োগ করা। তাহলেই আমরা পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ লাভ করতে পারবো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *